রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫, ০৮:২৩ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম
চৌহাট্টায় ট্রাকের ধাক্কায় মোটরসাইকেল আরোহী মৃত্যু বেসামাল ‘নেত্রী’ সিলেটের আরজু আটক সিলেটে র‍্যাবের খাচায় আলোচিত আ.লীগ নেত্রী আরজু,এখনও অধরা যুব মহিলা লীগ নেত্রী লাকি! শান্তিগঞ্জে ভূমিখেকোদের বিরুদ্ধে প্রাঃ স্কুল মাঠ থেকে অবৈধভাবে মাঠি উত্তোলনের প্রতিবাদে মানববন্ধন ও স্মারকলিপি প্রদান মানবাধিকার ও অনুসন্ধান কল্যাণ সোসাইটির নতুন কমিটি গঠন স্বর্নালী সাহিত্য পর্ষদ কুয়েত শাখার সভাপতি ও চ্যানেল থ্রি এর কুয়েত প্রতিনিধি লিটন আমিন সংবর্ধিত সাপ্তাহিক বৈচিত্র্যময় সিলেট পত্রিকার ঈদ পুনর্মিলনী ও মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত বর্ষবরণ উপলক্ষে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকছে নানা আয়োজন কুলাউড়ায় দুই মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সং/ঘ/র্ষে নিহত ১ বাঁচার অধিকারই হারাচ্ছে ফিলিস্তিনিরা: জাতিসংঘ

শিল্পকারখানার নিরাপত্তা আবশ্যক

মোঃ মোস্তফা মিয়া / ১৮০ পরিদর্শন
আপডেট : মঙ্গলবার, ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

বাংলাদেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখার ক্ষেত্রে শিল্পকারখানার অবদান চিরস্মরণীয়। কিন্তু রাজনৈতিক পটপরিবর্তনকালে শিল্পকারখানার নিরবিচ্ছিন্ন পরিবেশ বজায় রাখা সম্ভব হয় না। সুযোগ সন্ধানীরা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির দূর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে তাদের অনৈতিক আকাঙ্খা পূরণে তৎপর থাকে। যা স্বাভাবিক অর্থনৈতিক কার্যক্রমকে মারাত্নকভাবে ব্যহত করে।
আমাদের দেশে ‘ঘরপোড়ার মধ্যে আলু পোড়া খাওয়া’ কথাটি বেশ প্রচলিত। যখন কোনো বিপদ- আপদ নামিয়া আসে কোনো জনপদে, তখন একশ্রেণির সুযোগসন্ধানীর অভাব হয় না। এমনই একটি কথা ইংরাজিতেও প্রচলিত রহিয়াছে। তাহা হইল: Nero fiddles while Rome burns. অর্থাৎ রোম যখন পোড়ে, নিরো তখন বাঁশি বাজায়। সম্রাট নিরো ছিলেন রোমান সাম্রাজ্যের অন্যতম অধিপতি; কিন্তু নাশকাতমূলক অগ্নিকাণ্ডে রোম যখন পোড়ে, তখন তিনি নির্লিপ্ত ছিলেন। ৫ আগস্টের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর বিভিন্ন ক্ষেত্রে সুযোগসন্ধানীদের উপদ্রব যেমন বাড়িয়াছে, তেমনি কোথাও কোথাও সামষ্টিক দায়িত্বহীনতারও পরিচয় পাওয়া যাইতেছে। বিশেষ করিয়া, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির কাঙ্ক্ষিত উন্নতি না হওয়ায় এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে দুর্বৃত্তরা দেশে অস্থিরতা সৃষ্টির হীন প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।
সার্বিক পরিস্থিতির আলোকে এই মুহূর্তে জাতীয় অর্থনীতিকে বাঁচাতে শিল্প-কলকারখানাগুলির নিরাপত্তা প্রদান জরুরি হয়ে দেখা দিয়েছে। চলমান সময়ে নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জের রূপসীতে অবস্থিত গাজী টায়ারসহ দেশের বিভিন্ন শিল্পকারখানাতে যে, ভয়াবহ লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটিয়াছে, তাহা দুঃখজনক। বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রকাশিত খবর অনুযায়ী ইহাতে নিখোঁজ রয়েছে প্রায় ২০০ জন এর বেশী। নিখোঁজরা বহিরাগত এবং লুটপাটের জন্য কারখানাটিতে প্রবেশ করেছেন কয়েকশত মানুষ। এক পর্যায়ে বিবদমান দুই গ্রুপের হানাহানিতে অগ্নিসংযোগ করা হলে অনেকে সেখানে আটকা পড়েন। এই ঘটনায় অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট হামিদুর রহমানের নেতৃত্বে আট সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ইতিমধ্যে এই কমিটি সরেজমিনে সেই কারখানা পরিদর্শনও করিয়াছে। এই সমস্ত কারণে অন্যান্য শিল্প-কলকারখানার মালিক ও শ্রমিকদের মধ্যে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা দেখা যাচ্ছে। সেখানে দুই প্রতিষ্ঠিত শিল্পগ্রুপের মধ্যে চলে আসা দীর্ঘদিনের প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও শত্রুতামূলক আচরণের কারণে এমনটি ঘটিতে পারে। আবার ভূমিদস্যুতার কারণেও ইহাতে স্থানীয় মানুষের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটিতে পারে।

তার পূর্বে আমরা দেখেছি যে, রাজধানীতে বিভিন্ন বস্তিতে যখন আগুন লাগে এবং বস্তির অসহায় মানুষ ঘর হইতে আসবাবপত্র সরাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে, তখন রাস্তার ধারে রাখা টিভি, ফ্রিজ, হাঁড়ি-পাতিল, চেয়ার-টেবিল এমনকি জামাকাপড় পর্যন্ত চুরি হইতে। আবার কেহ কেহ মানবতার পার্শ্বে আসিয়া দাঁড়িয়ে বিপদগ্রস্ত মানুষকে সাহায্য-সহযোগিতা করে। বর্তমানে বন্যাকবলিত মানুষকে সাহায্য করিতে সমগ্র দেশে যে বিপুল সাড়া পড়েছে, ইহা হতে বুঝা যায়, দেশে সুযোগসন্ধানী ও দুর্বৃত্তরা সংখ্যায় মোটেও অধিক নহে; কিন্তু তারা যাতে কোনো অন্যায়-অনিয়মের সুযোগ না পায়, সেই প্রচেষ্টাই আমাদের অবশ্যই চালাতে হবে। এই জন্য সর্বাগ্রে দরকার আইনের শাসন ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন।

অবশ্য আমরা এই কথা বলিতে পারি নির্দ্বিধায় যে, ৫ আগস্টের পর একটা প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির তেমন বিপর্যয় দেখা যায় নাই। যেখানে উন্নত দেশেও দেখা যায়, গোলযোগের বিশেষ মুহূর্তে ব্যাপক লুটতরাজের ঘটনা ঘটে। সেই রকম পরিস্থিতি দেশে দেখা যায় নাই যাহা সৃষ্টিকর্তার অনুগ্রহ ছাড়া আর কিছুই নহে; কিন্তু এখন শিল্প- কলকারখানায় যেই ধরনের অনিরাপত্তা ও অনিশ্চয়তা বিরাজ করিতেছে, তাহা দূর করা প্রয়োজন। বেসরকারি প্রহরীদের উপস্থিতির পাশাপাশি শিল্পপুলিশের তৎপরতা বৃদ্ধি করা আবশ্যক। আলোচ্য অগ্নিসংযোগ ও দুর্ঘটনায় যাহারাই জড়িত থাকুক না কেন, তাহাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া আবশ্যক । যেহেতু টায়ার তৈরির কাঁচামাল ও রাসায়নিক অত্যন্ত দাহ্য, সেই কারণেই আগুন নেভাতে সময় লেগেছে। তাই ফায়ার সার্ভিসের উচিত সাবধানতার সহিত উদ্ধারকাজ শুরু করা। কেননা উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ভবনটি ধসের আশঙ্কাকে মাইনাস করার উপায় নাই। ইতিমধ্যে মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার শিল্পকারখানা, মালিক এবং শ্রমিকদের আন্তঃযোগাযোগের মাধ্যমে সুসম্পর্কের টেকসই উন্নয়ন এবং সুযোগ, সুবিধা এবং নিরাপদ গমনাগমন ও পরিবেশ সম্পর্কে চমৎকার বক্তব্য উপস্থাপন করেছেন। দেশবাসী আশা করেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দৃঢ়ভাবে প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবেলায় কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে দ্বিধাবোধ করবেন না।
লেখকঃ অধ্যক্ষ মোঃ মোস্তফা মিয়া
শিক্ষাবিদ ও এনজিও ব্যক্তিত্ব
০১৭১২-৮৫২১২৩


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরোও সংবাদ
এক ক্লিকে বিভাগের খবর