সিলেটের পাথর কোয়ারি সমূহের ইজারা কার্যক্রম শুরু

সিলেটের পাথর কোয়ারিসমূহের ইজারা কার্যক্রম শুরু হচ্ছে। বিগত ২০২০ সালের ১৮ই ফেব্রুয়ারি পাথর কোয়ারি ইজারা দেয়া বন্ধের জারিকৃত প্রজ্ঞাপনটি বাতিল করা হয়েছে। সোমবার বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব সাবরিনা আফরিন মোস্তফা স্বাক্ষরিত পত্রে পূর্বের আদেশটি বাতিল করায় সিলেটের বন্ধ থাকা সকল পাথর ও বালুমহাল থেকে পাথর, বালু, সাদামাটি উত্তোলনে আর বাধা রইলো না। এদিকে, সরকারের এ সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে উল্লাস চলছে সিলেটে। তবে আশঙ্কা আছে; কোয়ারির ন্যায্য মূল্য পাওয়ার। কোয়ারি সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, বিগত ৫ মাসে সিলেটে জাফলং, বিছনাকান্দি ও ভোলাগঞ্জ কোয়ারিতে অবাধে লুট হয়েছে। এতে ভূমির উপরিস্থিত সব পাথর লুটপাট করা হয়েছে। এতে দেখা গেছে; কোয়ারিগুলোর মোট পাথরের অর্ধেকই লুট করা হয়েছে। এদিকে, সরকারের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে শ্রমজীবী মানুষের পক্ষ থেকে সোমবার রাত ১০টায় কদমতলী বাস টার্মিনালে আনন্দ শোকরানা মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সিলেট বিভাগ পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি মাওলানা লোকমান আহমদের সভাপতিত্বে ও পাথর শ্রমিক বাঁচাও আন্দোলনের আহ্বায়ক, সাংবাদিক আবুল হোসেনের পরিচালনায় সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- সিলেট জেলা ট্রাক মালিক সমিতির সভাপতি আরিফ আহমেদ সুহেল, সাধারণ সম্পাদক জুবায়ের আহমদ, সিলেট জেলা বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আমিনুজ্জামান জুহাইর, সহ-সভাপতি আব্দুস সাত্তার মামুন, সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুর রকিব, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সিলেটের সাধারণ সম্পাদক জিয়াউল কবির পলাশ, সহ-সভাপতি আব্দুল মান্নান, অর্থ সম্পাদক কামরান আহমদ, বাস মালিক সমিতির নেতা নোমান আহমদ, নিয়াজ আহমদ, জিতু মিয়া, নজরুল ইসলাম, ময়না মিয়া, আবুল হাসনাত, মনসুর আলম, সিলেট জেলা ট্রাক পিকআপ কাভার্ডভ্যান শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল গফুর, সহ-সভাপতি শরিফ আহমদ, যুগ্ম সম্পাদক আহমদ আলী স্বপন প্রমুখ। আনন্দ মিছিল পরবর্তী শোকরানা সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে মাওলানা লোকমান আহমেদ সিলেটবাসীর পক্ষ থেকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে অভিনন্দন জানান এবং আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের ২০১৪ সালের পাথর উত্তোলন গাইডলাইন অনুযায়ী সেনাবাহিনী অথবা প্রশাসনের মাধ্যমে খাস কালেকশন শুরু করে পাথর বালু উত্তোলনের কার্যক্রম চালু করার আহ্বান জানান।
ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলার প্রধানতম সমস্যা পাথর ও বালু উত্তোলনে জড়িত কয়েক লক্ষ কর্মহীন হয়ে পড়া বারকি শ্রমিক ও ব্যবসায়ীদের কর্মসংস্থান ফিরিয়ে দিতে কেউ উদ্যোগ নেয়নি। সিলেটের সীমান্তবর্তী কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর ও কানাইঘাট উপজেলার বিভিন্ন পাথর ও বালুমহাল দীর্ঘ ৭ বছর ধরে বন্ধ ছিল। দীর্ঘদিন থেকে পাথর ও বালু উত্তোলন বন্ধ থাকায় এ অঞ্চলের প্রধানতম বারকি পেশায় সম্পৃক্ত ১০ লক্ষাধিক মানুষ ও ২০ সহস্রাধিক ব্যবসায়ী আয়-রোজগার হারিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। ইতিমধ্যে শত শত ব্যবসায়ী ব্যাংক ঋণে জর্জরিত হয়ে দেউলিয়া হয়ে পড়েছে। বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ী ঋণের বোঝা সইতে না পেরে ইতিমধ্যে আত্মহত্যা করেছে এবং অনেকে প্যারালাইজড হয়ে বিছানায় ছটফট করছে। অনেক প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী দেশ ছেড়ে বিদেশে পালিয়েছেন। বৈশ্বিক মহামারি কোভিড-১৯ এবং সাম্প্রতিক প্রলয়ঙ্কারী বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত বৃহত্তর সিলেটের মানুষের জীবন ও জীবিকা মারাত্মক সংকটাপন্ন হয়ে পড়েছে। আয়-রোজগার না থাকায় প্রান্তিক এ শ্রমজীবী মানুষগুলো দিশাহারা হয়ে পড়েছেন। সিলেটের পাথর ও বালুমহাল অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে বর্তমানে নীরব দুর্ভিক্ষ বিরাজ করছে। দেশের চলমান অর্থনৈতিক সংকটের এ ক্রান্তিলগ্নে আয়-রোজগারবঞ্চিত সিলেটের লাখ লাখ মানুষ। পাথর ও বালু উত্তোলনে জড়িত কয়েক লক্ষ পাথর শ্রমিক, হাজার হাজার ট্রাক মালিক শ্রমিক, স্টোন ক্রাশার মিল মালিক, ব্যবসায়ী, বেলচা শ্রমিক, হেমার শ্রমিক ও লোড আনলোড শ্রমিক পরিবার পরিজন নিয়ে সংকটাপন্ন অবস্থায় দিন যাপন করছে। অপরদিকে দেশের পাথর মহালগুলো বন্ধ রেখে ভারতসহ বিভিন্ন দেশ থেকে রিজার্ভের ডলার খরচ করে পাথর আমদানি করা হচ্ছে।