সোমবার, ২১ এপ্রিল ২০২৫, ০৬:০৭ অপরাহ্ন
শিরোনাম
বিশ্বনাথে ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে ব্যবসায়ী খুন কবি সিরাজুল হকের মৃত্যুতে পোয়েটস্ ক্লাবের শোক প্রকাশ চৌহাট্টায় ট্রাকের ধাক্কায় মোটরসাইকেল আরোহী মৃত্যু বেসামাল ‘নেত্রী’ সিলেটের আরজু আটক সিলেটে র‍্যাবের খাচায় আলোচিত আ.লীগ নেত্রী আরজু,এখনও অধরা যুব মহিলা লীগ নেত্রী লাকি! শান্তিগঞ্জে ভূমিখেকোদের বিরুদ্ধে প্রাঃ স্কুল মাঠ থেকে অবৈধভাবে মাঠি উত্তোলনের প্রতিবাদে মানববন্ধন ও স্মারকলিপি প্রদান মানবাধিকার ও অনুসন্ধান কল্যাণ সোসাইটির নতুন কমিটি গঠন স্বর্নালী সাহিত্য পর্ষদ কুয়েত শাখার সভাপতি ও চ্যানেল থ্রি এর কুয়েত প্রতিনিধি লিটন আমিন সংবর্ধিত সাপ্তাহিক বৈচিত্র্যময় সিলেট পত্রিকার ঈদ পুনর্মিলনী ও মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত বর্ষবরণ উপলক্ষে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকছে নানা আয়োজন

ভোলাগঞ্জে প্রতিদিন লুট হচ্ছে ১৫-২০ লাখ টাকার বালু-পাথর!

ডেস্ক রিপোর্ট / ১৬০ পরিদর্শন
আপডেট : শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ভোলাগঞ্জ কোয়ারিতে চলছে বালু ও পাথর লুটপাট। কোথাও কোথাও যন্ত্রদানব বোমা মেশিন ব্যবহার করে তোলা হচ্ছে বালু ও পাথর। এর বাইরে রেলওয়ের সংরক্ষিত ব্যাংকার এলাকায় চলছে হরিলুট।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, প্রতিদিন গড়ে ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকার বালু ও পাথর লুটপাট করা হচ্ছে। এ ছাড়া ৫ই আগস্টের পরবর্তী এক সপ্তাহ হরিলুট চলছে পর্যটন স্পট সাদা পাথরে। এ স্পটের অর্ধেক পাথরই লোপাট করা হয়েছে। পরে সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়েছে। দেশের বৃহত্তম পাথর কোয়ারি সিলেটের ভোলাগঞ্জ। পরিবেশ ধ্বংসের আশঙ্কায় প্রায় এক দশক ধরে এ কোয়ারিতে পাথর উত্তোলন বন্ধ রয়েছে। তবে থেমে ছিল না লুটপাট। স্থানীয়রা রাতের আঁধারে পাথর লুট করতো। গত ঈদ মৌসুমে একদফা হরিলুট হয়েছে সাদাপাথর। ওই সময় পাথরখেকোরা রাতের আঁধারে সাদাপাথর লুট করে।
স্থানীয় ভোলাগঞ্জসহ কয়েকটি এলাকার বাসিন্দারা জানিয়েছেন, ৫ আগস্টের প্রেক্ষাপট পরিবর্তনের সময় পাথরখেকোরা নতুন করে সুযোগ নেয়। রাতের আঁধারে শত শত নৌকা দিয়ে সাদাপাথরের উপরে থাকা বড় বড় পাথর সরিয়ে নেয়। ছাতক নিয়ে আসা হয় ট্রলারও। এসব ট্রলারে করে পাথর নিয়ে যাওয়া হয়েছে। পরে অবশ্য বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের অনুরোধে সেনাবাহিনীর সদস্যরা গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। সেনাসদস্যরা রাতের আঁধারে পাথর লুটের জন্য টহল জোরদার করে। একইসঙ্গে বিজিবিকে সক্রিয় রাখা হয়।
সাদাপাথর এলাকার ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, সেনাসদস্যদের হস্তক্ষেপে সাদাপাথর এলাকায় পাথর লুট বন্ধ হলেও সংরক্ষিত এলাকা ব্যাংকারে চলেছে লুট। সর্বদলীয় পাথরখেকো চক্রের সদস্যরা ৫ই আগস্ট সন্ধ্যায় আঘাত হানে ব্যাংকারে। সেখানে থাকা রেলওয়ের নিরাপত্তারক্ষীদের এক রুমে বন্দি রেখে প্রথমে লোহার যন্ত্রাংশ লুট করে।
এক রাতেই কোটি টাকার যন্ত্রনাংশ লুট করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন কালাইরাগ এলাকার বাসিন্দারা। লোহার ওই যন্ত্রাংশ নৌকা দিয়ে এনে গাড়ি করে সিলেটে বিক্রি করা হয়। একইভাবে ভোলাগঞ্জ পোর্ট এলাকায়ও নির্মাণাধীন ভবনের জন্য রাখা অন্তত ৫০ টন লোহার রড লুট করা হয়। এ পর্যন্ত অন্তত ৫ কোটি টাকার পাথর লুট করা হয়েছে বলে জানান তারা।
সর্বশেষ বুধবার গভীর রাতে যখন বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের ব্যানারে একদল যুবক কোয়ারি এলাকা থেকে উত্তোলিত বালু ও পাথরের গাড়ি থেকে চাঁদাবাজি করছিল তখন এলাকার লোকজন বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন। ৯ জনকে আটক করে পুলিশে দেন তারা। এ ঘটনায় পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মামলা নিয়েছে। এ মামলার বাদী হয়েছে উপজেলার ছাত্র সমন্বয়ক দাবিদার নুর আহমদ।
মামলার এজাহারে তিনি উল্লেখ করেছেন, আটককৃতরা শ্রমিকদের দিয়ে সাদাপাথর ও নদী থেকে অবৈধভাবে বালু ও পাথর চুরি করে নিয়ে আসছিল। পরে এ বালু ও পাথরে চাঁদাবাজি করছিল।
মামলার বাদী নুর আহমদ জানিয়েছেন, ভোলাগঞ্জ কোয়ারি ও সাদাপাথর এলাকা ওদের নির্দেশে বালু ও পাথর লুট করা হচ্ছিলো। বিষয়টি নিয়ে এলাকার শ্রমিক জনতা প্রতিবাদী হওয়ার পর বিষয়টি আলোচিত হয়। এ কারণে থানায় মামলা করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
এদিকে ভোলাগঞ্জ কোয়ারির তীরবর্তী দয়ারবাজার এলাকায় খেলার মাঠ ভরানোর কথা বলে কালিবাড়ি গ্রামের রজন মিয়ার নেতৃত্বে বোমা মেশিন লাগিয়ে পাথর ও বালু লুট করা হচ্ছে। তার সঙ্গে কোয়ারিতে পাথর লুটপাটে রয়েছে জামাল ও সাব্বির। তারা কোয়ারির তীরবর্তী খেলার মাঠে বালু ফেলে দেয়ার কথা বলে বোমা মেশিন দিয়ে কোয়ারি থেকে বালু ও সিঙ্গেল পাথর তুলছে। গত এক সপ্তাহ ধরে তারা এ কাজ করলেও প্রশাসন নীরব রয়েছে। এ ছাড়া তাদের নেতৃত্বে প্রতিদিন কোয়ারি থেকে ২৫ থেকে ৩০ গাড়ি সিঙ্গেল পাথরও লুটপাট করা হচ্ছে। এ নিয়ে এলাকায় ক্ষোভ বিরাজ করছে।
তবে বালু ও পাথর লুটের কথা অস্বীকার করেছে কালীবাড়ি গ্রামের রজন মিয়া। তিনি জানিয়েছেন, এলাকার মানুষের অনুরোধে তিনি মেশিন দিয়ে বালু তুলে মাঠ ভরাট করছেন। আজ-কালের মধ্যে তাদের মাঠ ভরাটের কাজ শেষ হয়ে যাবে। পাথর লুটের ঘটনা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
এবারের পাথর লুটপাটের অভিযোগে বিদ্ধ হচ্ছেন থানার ওসি মো. বদিউজ্জামানও। ২০১৮ সালে তিনি এ থানারই সাব-ইন্সপেক্টর ছিলেন। পাথর ও বালুখেকোদের সঙ্গে সখ্যতার কারণে ওই সময় তিনি বিতর্কিত হন। পরে অবশ্য তাকে থানা থেকে বদলি করা হয়েছিল। এবার ওসি হয়ে তিনি কোম্পানীগঞ্জে এসে ফের বালু ও পাথর লুটপাটে তার সিন্ডিকেটকে ব্যবহার করছেন।
এলাকার লোকজন জানান, ওসির ঘনিষ্ঠজনেরাই এখন ফ্রন্টলাইনে থেকে চাঁদাবাজি করছে। বুধবার রাতে ৯ চাঁদাবাজ জনতার হাতে আটকের পর ওসি মামলা গ্রহণে নানা টালবাহানা করেন। তিনি ওদের ছেড়ে দিতে নানা নাটকতীয়তার আশ্রয় নেন। পরে অবশ্য মানুষের ক্ষোভের মুখে তিনি মামলা নিয়েছেন।
তবে ওসি মো. বদিউজ্জামান জানিয়েছেন, যারা চুরি করে বালু ও পাথর লুট করছে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। প্রশাসনের তরফ থেকে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। অভিযানে যাদের ধরা হচ্ছে তাদের আসামি করা হচ্ছে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরোও সংবাদ
এক ক্লিকে বিভাগের খবর