শুক্রবার, ০৬ জুন ২০২৫, ০১:৪০ অপরাহ্ন
Headline
সিলেটে আনসার বাহিনীর মহাপরিচালক এর পক্ষ থেকে ঈদুল আযহার ঈদ সামগ্রী বিতরণ রাসেল সভাপতি ও নাসির সম্পাদক দক্ষিণ সুরমা ফুটবল একাডেমির নতুন কমিটি গঠন জন সম্পৃক্ততা ছাড়া স্কাউটিং সম্প্রসারণ সম্ভব নয়: বিভাগীয় কমিশনার দক্ষিণ সুরমায় আইন-শৃংখলা কমিটির নিয়মিত সভা আসন্ন ঈদ-উল আযহাকে ঘিরে আইন-শৃংখলা পরিস্থিতির ব্যাপারে প্রশাসনকে সতর্ক থাকতে হবে — ইউএনও ঊর্মি রায় মক্ষী রাণী লাকি আহমেদ এর দায়েরকৃত মিথ্যা ধর্ষণ মামলা খারিজ করে দিয়েছে আদালত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তরুণ তরুণীদের স্বাবলম্বী ও উদ্যোক্তা তৈরিতে সর্বাত্মক সহায়তা করে যাচ্ছে আনসার বাহিনী…… উপমহাপরিচালক জিয়াউল হাসান সকলকে পেশাদারিত্বের সাথে সততা, নিষ্ঠা আন্তরিকতা নিয়ে অর্পিত দায়িত্ব পালন করতে হবে …….উপ-মহাপরিচালক জিয়াউল হাসান জগন্নাথপুরের ভূমি জোরপূর্বক দখল ও নারী নির্যাতনের প্রতিবাদে মানববন্ধন দিরাইয়ে মোহাম্মদ শিশির মনির ফুটবল টুর্নামেন্টের উদ্বোধন উদ্যোক্তা হয়ে মানুষ ও দেশ সেবায় আত্মনিয়োগ করতে হবে- উপমহাপরিচালক জিয়াউল হাসান

শহীদি মার্চ : বৈষম্যবিরোধী দেশ গড়ার শপথ

ডেস্ক রিপোর্ট / ৩৩৪ Time View
Update : সোমবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের ক্ষমতাচ্যুতির এক মাস পূর্তিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ‘শহীদি মার্চ’। এ কর্মসূচি শুরুর আগে সমাবেশে হাজার হাজার মানুষ উপস্থিত হয়। গত বৃহস্পতিবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে থেকে ছত্র-জনতার শহীদি মার্চ শুরু হয়।
প্রতিবাদী মিছিল–স্লোগানে বৈষম্যবিরোধী বাংলাদেশ গড়ার শপথ আবারও উচ্চারিত হয় । ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের এক মাস পূর্তিতে গত বৃহস্পতিবার ৫ আগস্ট ২৪ তারিখ ঢাকার রাজপথে ‘শহীদি মার্চ’ কর্মসূচি পালন করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
‘শহীদি মার্চ’ শিরোনামে এই পদযাত্রায় বারবার ওঠে মুক্তির স্লোগান, মুক্ত বাংলাদেশের স্লোগান। তরুণ প্রজন্মের নতুন চেতনার গান। একই সঙ্গে উচ্চারিত হয় আবু সাঈদ, মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধসহ গণ–আন্দোলনে নিহত অনেকের শহীদের নাম।
পূর্বঘোষণা অনুযায়ী ৫ আগস্ট ২০২৪ বেলা তিনটায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে রাজু ভাস্কর্যের সামনে থেকে ‘শহীদি মার্চ’ শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বেলা দুইটা থেকেই সেখানে জড়ো হতে থাকেন বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্র–ছাত্রীরা। তাঁদের প্রায় প্রত্যেকের মাথায় দেশের পতাকা বাঁধা ছিল। অনেকের হাতে ছিল জাতীয় পতাকা। কর্মসূচিতে বিভিন্ন মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরাও অংশ নিয়েছেন। পাশাপাশি অংশ নেন বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষ।
বিকেল পৌনে চারটার দিকে রাজু ভাস্কর্যের সামনে থেকে শুরু হওয়া ‘শহীদি মার্চ’ পদযাত্রা নীলক্ষেত, নিউমার্কেট, কলাবাগান, মিরপুর রোড হয়ে ধরে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে সংসদ ভবনের সামনে যায়। সেখান থেকে ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার, শাহবাগ, রাজু ভাস্কর্য হয়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গিয়ে শেষ হয়। প্রায় ৪ ঘণ্টা পর সন্ধ্যা সাতটার দিকে ‘শহীদি মার্চ’ যখন শহীদ মিনারে এসে পৌঁছায়, তখন সেখানে আগে থেকেই হাজার হাজার মানুষ অবস্থান করছিল।
শহীদ মিনারের সামনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের পক্ষ থেকে পাঁচ দফা দাবি তুলে ধরা হয়। এর মধ্যে রয়েছে গণহত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনা। দ্রুততম সময়ের মধ্যে প্রতিটি শহীদ পরিবারকে আর্থিক ও আইনি সহযোগিতা দেওয়া। প্রশাসনে দুর্নীতিবাজ ও ফ্যাসিস্টদের দোসরদের চিহ্নিত করে অবিলম্বে বিচারের আওতায় আনা। গণভবনকে ‘জুলাই স্মৃতি জাদুঘর’ ঘোষণা করা এবং রাষ্ট্র পুনর্গঠনের রোডম্যাপ দ্রুত ঘোষণা করা।
‘শহীদি মার্চ’ কর্মসূচির সমাপ্তি শেষ করার আগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলম বলেন, ‘গণ–অভ্যুত্থানে আমাদের ভাইয়েরা রক্ত দিয়েছে। সেই অভ্যুত্থানের চেতনা ধরে রাখতে আমরা আবার রক্ত দিতে প্রস্তুত আছি।’
সারজিস বলেন, ‘ভুলেও কেউ ফ্যাসিস্টদের দোসর হওয়ার চেষ্টা করবেন না। যাঁরা ফ্যাসিস্টদের বিন্দুমাত্র ধারণ করেন, তাঁদের উদ্দেশে বলতে চাই, যদি দোসর হয়ে থাকার চেষ্টা করেন, তাহলে এ দেশের ছাত্র–জনতা একসঙ্গে তাদের প্রতিহত করবে। কোনো চাঁদাবাজ, ক্ষমতার অপদখলকারী, সিন্ডিকেটদের অবস্থান এ দেশে হবে না। ’
‘শহীদি মার্চ’ কর্মসূচিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ, আবু বাকের মজুমদার, আবদুল কাদের ও গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তির আহ্বায়ক আখতার হোসেনসহ অনেকে অংশ নেন এবং বক্তব্য প্রদান করেন।
রাজধানী ঢাকার পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন এলাকায় গতকাল ‘শহীদি মার্চ’ কর্মসূচি পালন করা হয়। এ কর্মসূচির মাধ্যমে গত জুলাই-আগস্টে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত হওয়া ছাত্র–জনতার প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়। একই সঙ্গে আহতদের মধ্যে এখনো যাঁরা হাসপাতালের বিছানায় কাতরাচ্ছেন, যাঁরা হাত-পা-চোখ হারিয়েছেন, তাঁদের প্রতি সমবেদনা ও শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করা হয়।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সাধারণ শিক্ষার্থীদের একটি প্ল্যাটফর্ম। যাঁদের নেতৃত্বে গণ–অভ্যুত্থান সংঘটিত হয়। গত ৫ আগস্ট ২০২৪ গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়।
২০২৪ এর জুলাই ও আগস্টের শুরুতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলার সময় পুলিশের গুলিতে নিহত ব্যক্তিদের স্বজনেরাও গতকালের ‘শহীদি মার্চ’ কর্মসূচিতে অংশ নেন। তাঁদের একজন ঢাকার ডেমরার বাসিন্দা আবদুর রব মিয়া। গত ৫ আগস্ট সকালে যাত্রাবাড়ী এলাকায় পুলিশের গুলিতে তাঁর বড় ছেলে মিরাজ হোসেন নিহত হন।
নিহত মিরাজের বাবা আবদুর রব প্রথম আলোকে বলেন, আন্দোলনে নিহত প্রত্যেককে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিতে হবে। ছেলের আয়ে সংসার চলত জানিয়ে তিনি বলেন, রাষ্ট্র ও ছাত্র–জনতার কাছে প্রত্যাশা, শহীদ পরিবারগুলোকে কেউ যাতে ভুলে না যায়।
নিহত ছেলের ছবি নিয়ে ‘শহীদি মার্চ’ কর্মসূচিতে অংশ নেন বাবা রমজান আলী। তাঁর ছেলে মোবারক হোসেন (১৩) গত ১৯ জুলাই রাজধানীর গ্রিন রোড এলাকায় পুলিশের গুলিতে নিহত হয়।
রমজান আলী প্রথম আলোকে বলেন, পুলিশের গুলি তাঁর ছেলের মাথায় লেগেছিল। তিনি ছেলে হত্যার বিচার দাবি করেন।
আওয়ামী লীগ সরকারের ক্ষমতাচ্যুতির এক মাস পূর্তিতে ‘শহীদি মার্চ’ কর্মসূচিতে খুনের বিচারের দাবিতে সোচ্চার ছিলেন ছাত্র–জনতা। আন্দোলনে নিহতদের বিচারের দাবিতে স্লোগানে স্লোগানে রাজপথ প্রকম্পিত করেন তাঁরা।
কখনো স্লোগান উঠেছে, ‘আমার ভাই কবরে/ খুনি কেন বাইরে’; ‘বিচার চাই, বিচার চাই/ খুনি হাসিনার বিচার চাই’। পথ চলতে চলতে কখনো আবার স্লোগান উঠেছে ‘আবু সাঈদ মুগ্ধ/ শেষ হয়নি যুদ্ধ’; ‘স্বৈরাচারের ঠিকানা/ এই বাংলায় হবে না’, ‘তুমি কে আমি কে/ বাংলাদেশ বাংলাদেশ’। আবার কখনো স্লোগান হয়েছে ‘ভারতের দালালেরা/ হুঁশিয়ার, সাবধান’; ‘দিল্লি না ঢাকা/ ঢাকা ঢাকা’।
‘শহীদি মার্চ’–এ অংশ নেওয়া ঢাকার বাড্ডা এলাকার বাসিন্দা সাঈদ আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, অন্যায়–অবিচার, গুম, খুন, জুলুম ও বৈষম্য দূর করতে ছাত্র–জনতা রাজপথে নেমেছিলেন। অতীতের মতো জুলুম–অনাচার–বৈষম্য যাতে না হয়, সেটাই সবার প্রত্যাশা। শহীদি মার্চ এর মাধ্যমে ছাত্র-জনতা বৈষম্যবিরোধী দেশ গড়ার শপথ নিয়েছেন।
আমাদের তরুণ প্রজন্মকে নিয়ে হতাশার প্রয়োজন নেই। যে কোন কোনো প্রতিকূল পরিবেশ অতিক্রম করে নির্দিষ্ট লক্ষ্যস্থলে পৌঁছার সক্ষমতা তাঁরা ইতিমধ্যে অর্জন করেছে। তরুণ প্রজন্ম অতীতেও পরাজয় বরণ করে নাই, বর্তমানেও করে নাই এবং ইনশাআল্লাহ ভবিষ্যতেও পরাজয় স্বীকার করবে না। আমাদের তরুণ সমাজ আমাদের অহংকার। তাদের স্বপ্ন দ্রুতগতিতে জনস্বার্থে বাস্তবায়নের জন্য সরকারের বিভিন্ন বিভাগের ফ্যাসিস্টদের বিরুদ্ধে জরুরি ভিত্তিতে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া আবশ্যক।
লেখকঃ
অধ্যক্ষ মোঃ মোস্তফা মিয়া
শিক্ষাবিদ ও এনজিও ব্যক্তিত্ব
০১৭১২-৮৫২১২৩


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
এক ক্লিকে বিভাগের খবর