সোমবার, ২১ এপ্রিল ২০২৫, ০৬:০৪ অপরাহ্ন
শিরোনাম
বিশ্বনাথে ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে ব্যবসায়ী খুন কবি সিরাজুল হকের মৃত্যুতে পোয়েটস্ ক্লাবের শোক প্রকাশ চৌহাট্টায় ট্রাকের ধাক্কায় মোটরসাইকেল আরোহী মৃত্যু বেসামাল ‘নেত্রী’ সিলেটের আরজু আটক সিলেটে র‍্যাবের খাচায় আলোচিত আ.লীগ নেত্রী আরজু,এখনও অধরা যুব মহিলা লীগ নেত্রী লাকি! শান্তিগঞ্জে ভূমিখেকোদের বিরুদ্ধে প্রাঃ স্কুল মাঠ থেকে অবৈধভাবে মাঠি উত্তোলনের প্রতিবাদে মানববন্ধন ও স্মারকলিপি প্রদান মানবাধিকার ও অনুসন্ধান কল্যাণ সোসাইটির নতুন কমিটি গঠন স্বর্নালী সাহিত্য পর্ষদ কুয়েত শাখার সভাপতি ও চ্যানেল থ্রি এর কুয়েত প্রতিনিধি লিটন আমিন সংবর্ধিত সাপ্তাহিক বৈচিত্র্যময় সিলেট পত্রিকার ঈদ পুনর্মিলনী ও মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত বর্ষবরণ উপলক্ষে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকছে নানা আয়োজন

নদী খনন প্রকল্প এখন ‘গলার কাঁটা’

ডেস্ক রিপোর্ট / ১৫৩ পরিদর্শন
আপডেট : মঙ্গলবার, ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

খননের অভাবে চার নদ-নদীতে শুকিয়ে গিয়েছিল পানি। তাই নাব্য ফেরাতে নদী খনন প্রকল্প শুরু করেছে সরকার। উত্তোলন করা বালু নদীর তীর সংরক্ষণ কাজের পাশাপাশি গ্রামীণ উন্নয়ন ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের কাজে ব্যবহারের কথা ছিল। কিন্তু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বালু বাণিজ্যিকভাবে বিক্রি করছে। এ ছাড়া উত্তোলিত বালু নদীর তীরবর্তী আবাদি জমিতে রাখা হয়েছে। ফলে এসব জমিতে চাষাবাদ করা যাচ্ছে না।

গাইবান্ধা থেকে বগুড়া হয়ে সিরাজগঞ্জ পর্যন্ত অভ্যন্তরীণ মৃতপ্রায় বাঙ্গালী, করতোয়া, ফুলজোড় ও হুরাসাগর- এই চারটি নদ-নদী দীর্ঘদিন খননের অভাবে মৃতপ্রায় হয়ে গিয়েছিল। এসব নদ-নদী পানিশূন্য হওয়ায় একদিকে যেমন ব্যাহত হতো নৌ-চলাচল, তেমনি শুষ্ক মৌসুমে সেচকাজে মিলত না কাঙ্ক্ষিত পানি। সংকট ছিল মাছেরও।

তাই মৃতপ্রায় এসব নদ-নদীর নাব্য ফেরাতে সরকার গাইবান্ধা, বগুড়া হয়ে সিরাজগঞ্জ পর্যন্ত ২১৭ কিলোমিটার নদী খনন প্রকল্প গ্রহণ করেছে। এ প্রকল্পের আওতায় নদীর তীর সংরক্ষণ ও সবুজায়নও করার কথা। প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ২ হাজার ২৩৫ কোটি টাকা। ২০১৯ সাল থেকে শুরু হয় তিন বছর মেয়াদি এ প্রকল্প। নির্ধারিত সময়ে প্রকল্পের কাজ শেষ না হওয়ায় আরও দুই বছর সময় বর্ধিত করা হয়েছে।

এই প্রকল্পের উত্তোলিত বালু নদীর তীরবর্তী আবাদি জমিগুলোতে স্তূপ রাখা হয়েছে। এ বালু নদীর তীর সংরক্ষণ কাজের পাশাপাশি গ্রামীণ উন্নয়ন ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের কাজে ব্যবহারের কথা থাকলেও, তা দেদার বাণিজ্যিকভাবে বিক্রি করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও এলাকার প্রভাবশালীরা। আর বালু পরিবহনে ভারী যানবাহন ব্যবহার করায় গ্রামীণ রাস্তাঘাট ক্ষতির পাশাপাশি দূষিত হচ্ছে পরিবেশ।

এ ছাড়া কৃষিজমিতে বালু মজুত করে রাখায় অনাবাদি হয়ে পড়ছে এসব জমি। এ বিষয়ে প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করেও সুরাহা মেলেনি বলে জানান ভুক্তভোগীরা। আর প্রশাসন বলছে, উত্তোলিত বালু দ্রুত নিলামে বিক্রি করে সরকারের কোষাগারে অর্থ জমা দেয়া হবে। গত মঙ্গল ও গতকাল বুধবার সরেজমিনে ঘুরে এ তথ্য জানা গেছে।

জেলার কামারখন্দের আলোকদিয়া গ্রামের সেলিম আহম্মেদ বলেন, খননকাজে নিয়োজিত বাদল এন্টারপ্রাইজের ঠিকাদারকে টাকা দিয়ে নদী থেকে বালু উত্তোলন করে নলকা এলাকায় নিজের জমিতে রেখে বিক্রি করছেন।

একই এলাকার লুৎফর রহমান বলেন, বাদল এন্টারপ্রাইজের ঠিকাদার নদী থেকে উত্তোলিত বালু নলকা এলাকায় আবাদি জমিতে স্তূপ করে রেখেছেন। সেখান থেকে বালু কিনে বাণিজ্যিকভাবে বিক্রি করছেন।

অপরদিকে রায়গঞ্জের সাহেবগঞ্জ এলাকার হোটেল ব্যবসায়ী নুর নবীউল আহসান বলেন, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বাদল এন্টারপ্রাইজ তার চার বিঘা জায়গায় মাটি স্তূপ করে রেখে বিক্রি করেছে। জায়গার ভাড়া বাবদ তার জমি নিচু হওয়ায় কিছু বালু তাদের কাছ থেকে রেখে দিয়েছেন।

তবে প্রকল্পের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বাদল এন্টারপ্রাইজের ম্যানেজার শফিকুল ইসলামের মুঠোফোনে গত মঙ্গলবার যোগাযোগ করা হলে কল রিসিভ করেননি। গতকাল বুধবার সন্ধ্যায়ও কল করলে নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।

রায়গঞ্জ উপজেলার সীমানা থেকে জয়েনপুর পর্যন্ত ৮ কিলোমিটার এলাকায় নদী খনন করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান টিএনবি ড্রেজিং প্রজেক্ট। এ প্রতিষ্ঠানে ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী রাশেদুল ইসলাম বলেন, নদী খননের বালু মহাসড়ক নির্মাণ প্রকল্পসহ বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করছেন।

রায়গঞ্জের নলকা ইউপির ৯ ওয়ার্ডের সদস্য ইউসুফ আলী বলেন, গত দুই থেকে আড়াই বছর ধরে গ্রামীণ রাস্তায় অবৈধভাবে ১০ চাকার ড্রাম ট্রাক দিয়ে বালু পরিবহন করা হচ্ছে। এ কারণে ফুলজোড় কলেজ থেকে বকুলতলা পর্যন্ত সড়ক চলাচলের অনুপযোগী হয়ে গেছে। মাঝেমধ্যেই ঘটছে দুর্ঘটনা। বালু পরিবহনের কারণে ধুলাবালিতে এলাকার পরিবেশও দূষিত হচ্ছে।

রায়গঞ্জ উপজেলার চরতেলিজানা গ্রামের কৃষক মহসিন কবির লিটন মোল্লা বলেন, তার জমি জোরপূর্বক লিজ নিয়ে ঠিকাদার মাটি স্তূপ করে রেখেছে। বালু পরিবহনের কারণে অভ্যন্তরীণ রাস্তা নষ্ট হওয়ায় বাড়িতে আসা-যাওয়ায় কষ্ট হয়। নদীর তীর কাটার কারণে অন্য আবাদি জমিগুলোও ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে।

চান্দাইকোনা ইউপির শিলন্দা গ্রামের আমির হোসেন বলেন, নদী থেকে উত্তোলিত বালু মসজিদ, মাদ্রাসা, কবরস্থানসহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজে বিনা মূল্যে ব্যবহার হওয়ার কথা ছিল, অথচ দেদার বাণিজ্যিকভাবে বিক্রি করা হচ্ছে। নদী খননকাজে নিয়োজিত ঠিকাদার, দলীয় নেতা-কর্মী ও প্রভাবশালীরা জড়িত।

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোবারক হোসেন বলেন, প্রশাসনের অজান্তে নদী থেকে উত্তোলিত বালু বিক্রি করা হচ্ছে। এসব বন্ধে বিভিন্ন সময় অভিযান চালিয়ে জরিমানাও করা হচ্ছে। তবু বালু বিক্রি বন্ধ না হওয়ায় উত্তোলিত বালু প্রকাশ্য নিলামে বিক্রি করে সরকারের কোষাগারে টাকা জমা দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী মাহবুবুর রহমান বলেন, রায়গঞ্জ, কামারখন্দ, উল্লাপাড়া ও শাহজাদপুর উপজেলার ২৮টি স্থানে স্তূপ করে রাখা বালু চিহ্নিত করা হয়েছে। দরপত্র বিক্রি চলছে, আগামী ১৭ জানুয়ারি দরপত্র দাখিল হবে।

প্রকল্পের অগ্রগতি প্রসঙ্গে মাহবুবুর রহমান বলেন, প্রকল্পের সিরাজগঞ্জ অংশের ৮৫ কিলোমিটার এলাকায় ৬৫ ভাগ নদী খনন হয়েছে। ১২টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এ কাজে নিয়োজিত রয়েছে। এ প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে নদীতে পানিপ্রবাহের পাশাপাশি মৎস্য চাষ ও কৃষির উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরোও সংবাদ
এক ক্লিকে বিভাগের খবর